মোটিভেশনাল মূলক ছোট গল্প"webangali.com |
অনুপ্রেরণামূলক গল্প
সিহাব নামের একজন ছেলে , একবার একটা বড় কারখানায় মিস্ত্রির পোস্টে জয়েন করে । তো তার ট্রেনিং শুরু হয় সেই কারখানাযর হেড সুপার ভাইজারের আনডারে । এর মধ্যে সিহাব মোটামুটি এক মাসের মধ্যেই দারুণ কাজ শিখে যায় । আরো মাস দুয়েক পর, যে হেড সুপার ভাইজার ছিলেন, তিনি রিটায়ার্ড হয়ে যান। এজন্য বড় করে গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন করে তাকে ফেয়ার ওয়েল জানানো হয়। সেই হেড সুপারভাইজার এর নাম ছিল মহেশ বাবু । সিহাব তার কলিগ দের থেকে জানতে পারে , যে এই মহেশ বাবু আমার থেকেও নিচের পোস্টে একজন হেল্পার এর পোস্টে জয়েন করেছিল । এবং কাজের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রোমোশন পেয়ে হেল্পার থেকে মিস্ত্রি, তারপর হেডমিস্ত্রি তারপর সুপারভাইজার এবং সে হেড সুপারভাইজার হয়ে তার পরে রিটায়ার্ড করেন ।
উপদেশমূলক গল্প ,
আর তিনি কোম্পানির মালিকের এত প্রিয় ছিলেন যে , কোম্পানির মালিক তাকে ছাড়া একা চলতে পারত না । আর সেই কারণেই এত গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন করে তাকে ফেয়ার অয়েল দেওয়া হলো। তো যাই হোক সিহাব এগুলো শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে আরো মন দিয়ে কাজ শুরু করে । এবং সে ভাবতে থাকে যে , যদি মহেশ বাবু এই জায়গায় থেকে ওই জায়গায় হতে পারে তাহলে আমিও একদিন আমার স্বপ্নের হেড সুপারভাইজার পোস্টে অবশ্যই পৌঁছতে পারব । প্রতিবছর শেষে যখন প্রোমোশনের লিস্ট বেরোয় তখন সে ভাবতে থাকে যে , আমার নাম এ বছরে অবশ্যই প্রমোশনের লিস্টে থাকবে , কিন্তু প্রতি বছরের তাকে নিরাশ হতে হয় । এবং এইভাবে এক বছর দু বছর নয় বিনা প্রমোশনে এ তার একই পোস্টে পাঁচ বছর কেটে যায় । "amra bangali"
এর পর এক মিস্ত্রির প্রমোশন হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু তার আর কিছুতে প্রমোশন হচ্ছে না । অথচ সে কিন্তু তার কাজে কোন রকম খামতি রাখে না । পাঁচ বছরের টোটাল তার শরীর খারাপের জন্য ম্যাক্সিমাম দশ থেকে পনেরো দিন ছুটি নিয়েছিল । বাকি সে একদম ফুল মনোযোগ এর সঙ্গে কোম্পানিতে কাজ করে যায় । তা সত্ত্বেও বস এর যেন তাকে চোখেই পড়ে না । তো পাঁচ বছর এইভাবে কেটে যাওয়ার পর সে ঠিক করে যে , সে মহেশ বাবুর কাছে পরামর্শ নিতে যাবে । যখন উন্নতি হচ্ছে না তখন অভিজ্ঞ এর পরামর্শ নেওয়াই উচিত । তো যাই হোক, সে একটা ছুটির দিন দেখে মহেশ বাবুর বাড়িতে চলে যায় । মহেশ বাবু তাকে ঘরে ডাকে, বসায়, চা-ঠা খাওয়ায় এবং তাকে জিজ্ঞেস করে যে বল তোমার সমস্যা কি ? তো সিহাব তাকে টোটাল ব্যাপারটা খুলে বলে। সিহাব বলে যে , আপনি তো জানেন যে আমি কতটা মনোযোগ দিয়ে কাজ করি, আমি ছুটিও নিই না, কাজে খামতিও রাখিনা, কিন্তু তা সত্ত্বেও পাঁচ বছর কেটে গেল, একবারও আমার প্রমোশন হলো না । "আমরা বাঙালি"
কেউ আমায় পাত্তা না দিলে আমি কি করব ?
আমার পাশ দিয়ে আমার কত কলিগের প্রমোশন হয়ে গেল, কিন্তু আমি যে পোস্টে এ জয়েন করেছিলাম, এখনো সেই পোস্টে এই থেকে গেলাম । এই বছরটাও শেষ হতে চলল আর আমি আমার ভাগ্যকে আমি জানি , যে আমার প্রোমোশন আর হবে না । তাই আপনার কাছে এসেছি আপনি কিছু অ্যাডভাইস দিন যাতে এই বছরটা অন্তত প্রোমোশান হয়ে যায় । এই সব শুনে সেই হেড সুপারভাইজার বললেন যে , তোমাকে সবার আগে তোমার মালিকের কাছে নিজের ভ্যালু বাড়াতে হবে । তোমার মালিককে বোঝাতে হবে যে তোমাকে ছাড়া তার কোম্পানি অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। তো সিহাব বললো কি করে সেটা করব ? তো মহেশ বাবু বললেন যে , তুমি যে কারখানায় কাজ করো, সেখানে সব চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটা বাল্ব জ্বলে । তো সেই বাল্বগুলো মাসের পর মাস জ্বলতে থাকে সেগুলোকে কখনো খোলা হয় না, পরিষ্কার করা হয় না , সেগুলোর উপর ধুলো জমে যায় ।
যখন সেই সবগুলো বাল্বের মধ্যে কোনো একটা বাল্ব এর উপর স্পেশালি ভাবে সবার নজর যায় । যখন কোন একটা বাল্ব অনেকদিন ধরে চলতে চলতে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় , তখন সবার খেয়াল পড়ে যে , ওই জায়গায় একটা বাল্ব জ্বলছিল যার তলায় কাজ হচ্ছিল এবং সেই বাল্বটা বন্ধ হয়ে গেছে বলে সেখানে কাজটা হবে না ।
ঠিক এমন টাই হয়েছে তোমার সাথে। তোমার মালিকও তোমার অভাবটা কোনদিন বুঝতে পারেনি । কাজ তো করেছ খুব ভালো, কিন্তু তোমার মালিক কে বোঝাতে পারোনি, যে তোমাকে ছাড়া তোমার মালিকেরও চলবে না । তো তুমি এক কাজ করো, তুমি কালকে গিয়ে সাত দিনের ছুটি নিয়ে নাও । এবং সাতদিন পরে আবার জয়েন করে কাজ শুরু করে দাও । এই সাত দিন তোমার মালিক কে বুঝতে দাও যে তোমার কাজটা তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তখন সিহাব মহেশ বাবুকে তাড়াতাড়ি করে ধন্যবাদ বলে চলে গেল ফ্যাক্টারিতে। "মোটিভেশনাল ছোট গল্প"
সিহাবের প্রমোশন পাওয়ার পর কি হলো ...
সিহাব ছুটির দরখাস্ত দেবে বলে দ্রুত মহেশ বাবুর বাড়ি থেকে চলে আসে। কিন্তু মহেশ বাবু তখনও কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল , যেটা সিহাব না শুনেই চলে যায়। তো যাই হোক সে দরখাস্ত দিয়ে ছুটি নিয়ে তো বাড়ি চলে গেল । এদিকে কোম্পানিতে একদিন দুদিন কেটে গেল , কোন সমস্যা হয়নি । কিন্তু তিন নম্বর দিন এমন একটা প্রবলেম এলো যেটা ওই ছেলেটা মানে সিহাব ছাড়া কেউ করতে পারবে না । তো সবাই মিলে অনেক চেষ্টা করলেও প্রবলেম টা সলভ করতে পারল না। কিন্তু যখন একদমই করতে পারলো না, তখন মালিকের কাছে খবর দিল । মালিক সেদিন বুঝতে পারল যে সিহাব তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ । সে সিহাব কে দ্রুত ডেকে পাঠালো৷ সিহাব এসে প্রবলেম টা সলভ করে দিল । এবং মালিক তাকে একটা পোস্ট উপরে প্রমোশন করে দিল ।
এজন্য তো সিহাব বিশাল খুশি , সে বুঝে গেল যে মহেশ বাবুর কথা টা ঠিক কাজ করে গেছে । যতই হোক, এত অভিজ্ঞতা একজন মানুষ সে বুঝতে পারলো যে কিভাবে সবার নজরে আসতে হয় এবং কিভাবে প্রোমোশন পেতে হয় । মোটিভেশনাল ছোট গল্প"
তো সিহাব এই টা বুঝার পর থেকে, প্রতি দু তিন মাস পর পর এরকম তিন চার দিন ছুটি নিয়ে চলে যেত । তো সেই ছুটিতে থাকাকালীন কোন প্রবলেম হলে তাকে ডাকা হতো । আর তাকে কল করে একটু খোসামোদ করা হতো প্রবলেমটা সলভ করে দেওয়ার জন্য । সে প্রবলেমটা সলভ করতো এবং বিশাল আনন্দে থাকত। এইভাবে আরো এক বছর কেটে গেল এবং এক বছর পরে কোন কারণ ছাড়াই একবার অমিত চার দিনের ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে । তো সে যখন ছুটি কাটিয়ে কারখানায় ফিরল, মালিক তাকে ডেকে হাতে একটা লেটার ধরিয়ে দিল । সিহাব ভাবলো তার আরও একটা প্রোমোশন হয়েছে ।
কিন্তু সে যখন লেটারটা খুলে দেখল, সে দেখল তাতে লেখা আছে যে তাকে কোম্পানি থেকে বাদ করে দেওয়া হচ্ছে । কারণ সে অত্যাধিক বেশি ছুটি কাটায় , তো লেটার দেখে তো সিহাবের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল । সে কি করলো, ওই লেটার নিয়ে আবারও মহেশ বাবুর কাছে দৌড়ালো । মহেশ বাবুকে গিয়ে বলল যে আপনি কি উপদেশ দিলেন তাতে তো আমার প্রমোশন হল, এবং তারপর আমাকে এক বছর পর কোম্পানি থেকে আমাকে বের করে দিল,
মহেশ বাবু যা বললেন...
সেদিনকে যখন আমি কথাগুলো বলছিলাম, তখন তুমি এত বেশি এক্সাইটেড হয়ে গেছিলে যে আমার পুরো কথা না শুনেই তুমি চলে গেছিলে। এবং তারপর থেকে একবারও আমার সঙ্গে দেখা করোনি। এখন সবার আগে তোমাকে একটা বড় উপদেশ দিই ।
যে , অর্ধেক জ্ঞান জ্ঞানহীনের থেকে বেশি সাংঘাতিক । তাই কোনো একটা বিষয়ে পুরোটা না শুনে , না বুঝে কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না। সেদিনকে ওই কথাগুলো বলার পর আমি আরো একটা কথা তোমাকে বলতাম । কিন্তু তুমি বাকি টা না শুনেই চলে গেছ। আমি সেদিন তোমায় এই কথাটাই বলতে চেয়ে ছিলাম।
আচ্ছা তোমার মনে আছে কি ? তোমাকে সেদিনকে বাল্বের উদাহরণ টা দিয়েছিলাম। তাতে কি বলেছিলাম যে, একটা বাল্ব যদি দিনের পর দিন একভাবে জ্বলে থাকে তাহলে হয়তো অনেক সময় তাকে কেউ লক্ষ্য করে না । কখন তাকে লক্ষ্য করা হয় ? যখন সে অনেকদিন একটানা জলার পর হঠাৎ করে অফ হয়ে যায় । কিন্তু সেই বাল্বটাই যদি কিছুদিন পর পর একবার করে অফ হয়ে যায়, তখন তাকে কি করা হয় ? তাকে একবার দেখা হবে, দুবার দেখা হবে, পাঁচবার দেখা হবে। কিন্তু যখন বোঝা যাবে যে, তাঁর বারবার অফ হয়ে যাওয়ার কাজের খুব অসুবিধা হচ্ছে , তখন তাকে ওখান থেকে চেঞ্জ করে একটা নতুন বাল্ব সেখানে লাগিয়ে দেওয়া হবে ।
তোমার সাথেও কিন্তু ঠিক এই একই জিনিস ঘটেছে. তুমি একবার ছুটি নিয়ে তোমার মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছিলে যে তোমার মূল্যটা তার কাছে কতটা। কিন্তু বারবার একই ভাবে কোনো কারণ ছাড়াই ছুটি নিয়ে , তুমি কিন্তু তোমার কোম্পানির কাজেরই অসুবিধা করেছ। তোমাকেও একবার , দুবার , পাঁচবার , সাতবার , দেখা হয়েছে তারপর যখন বোঝা গেছে যে তুমি এটা ইচ্ছে করে করছো। তখন তোমাকে সেখান থেকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
মোরাল বা নৈতিকতা;
আসলে আমাদের লাইফেও কিন্তু মাঝে মাঝে সিহাবের মতো ঘটনা ঘটে । সেটা , সম্পর্কের ক্ষেত্রেও হতে পারে কিংবা ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে হতে পারে। আমরা অনেক সময় একটা সম্পর্ক কিংবা একটা ক্যারিয়ার এ নিজের ক্ষমতা হান্ড্রেড পার্সেন্ট হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও অপরদিকে মানুষটা আমাদের ভ্যালু দেয় না। তো এরকম সিচুয়েশনে আমাদের কি করা উচিত ? অপরদিকের মানুষটা যাতে আমাদের মূল্যটা বুঝতে পারে সেই জন্য নিজেকে একটু খানি সরিয়ে নিয়ে আসা উচিৎ । যাতে আমাদের অনুপস্থিতিতে সে আমাদের রিয়েল ভ্যালুটা বুঝতে পারে ।"মোটিভেশনাল গল্প"
কিন্তু কখনোই এই সুযোগটার অপব্যবহার করা উচিত নয় । আমাদের সবসময় একটা ব্যালেন্স করে চলা উচিত । আমরা যখনই এই সুযোগের অপব্যবহার করব, তখনি কিন্তু আমাদের ঠিকই পস্তাতে হবে । সেটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে হোক কিংবা ক্যারিয়ার এর ক্ষেত্রে হোক । মনযোগ তো আমাদের দিতেই হবে। প্রচেষ্টা আমাদের হান্ড্রেড পার্সেন্ট ই দিতে হবে । কিন্তু একটু ব্যালেন্স করে । কারণ একটা ব্যালেন্স লাইফ-ই পারে আমাদের রিয়াল ভ্যালু সবচেয়ে বেশি বাড়াতে । "অনুপ্রেরণামূলক গল্প"
আর জীবনে সফল হওয়ার জন্য এটা কিন্তু একটা বড়ো ফ্যাক্টর। তো তোমাদের এই ব্যাপারে কি মতামত কমেন্ট এ অবশ্যই জানাবে। আর এই পোস্ট টি তোমার সকল কাছের বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিও । আমরা বাঙালী ব্লগের পক্ষ থেকে আমি অন্তর, আবারও নতুন কোনো গল্পে তোমার সাথে কথা হবে। ভালো থেকে আর ভালো রেখো । "WeBangali"
0 Comments: